Tuesday, January 13, 2009

শিক্ষাচেতনায় বাস্তবতা

সুশান্ত বর্মন

শিক্ষা কি? শিক্ষার উদ্দেশ্য কি? শিক্ষা কেন কিংবা শিক্ষার প্রভাব বলয় কতদূর এবম্বিধ বিবিধ প্রশ্নের সামনে যখন দাঁড়াই তখন বিব্রত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সংজ্ঞার ভারে প্রশ্নাবলীকে ব্যাখ্যা করা সহজ হলেও সামাজিক প্রেক্ষিতে উত্তরদান বড়ই জটিল।

শিক্ষা বিষয়ে সক্রেটিসের মন্তব্য “শিক্ষার মাধ্যমে সত্যের মুক্তি এবং মিথ্যার বিলুপ্তি ঘটে।
ফ্রেডরিক ফ্রয়েবেল এর মতে “শিশু সব গুণ নিয়ে জন্মায়। শিক্ষার লক্ষ্য হবে এইসব গুণের বা সম্ভাবনার উন্মেষণ।”
হার্বার্ট স্পেনসার মনে করেন “জীবনপরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজনের মধ্য দিয়ে জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়ার কৌশলই হল শিক্ষা।”
কার্ল মার্কস এর মতে “শিক্ষার অর্থ কোন কিছু মেনে নেওয়া বা গ্রহণ করা নয়। শিক্ষার অর্থ হল সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন “তাকেই বলি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা, যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্বসত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।”
ফ্রান্সিস বেকন বলেন “Studies serve for delight, for ornament, and for ability.”
জাঁ জ্যাক রুশো শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন “Exercise the body, the organs, the senses and powers, but keep the soul lying follow as long as you can.”
স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন “Education is the manifestation of perfection already in man.”
মাদাম মারিয়া মন্তেসরীর মতে “Education is the active help given to the normal expansion of the life of the child.”
জন ডিউই মনে করেন “Education is development of all those capacities in the individual which will enable him to control his environmental and fulfil his responsibilities.”

কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। জ্ঞানার্জনের যে মূল্য তা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে এসেছে। নিমগ্ন হয়ে সত্য খোঁজার চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু সাজেশন অনুসরণ করা অনেক সোজা- এই সরল সমীকরণ এখন সবাই জেনে গেছে। তাই পণ্ডিতদের সংজ্ঞায় যাই থাকুক না কেন শিক্ষার উদ্দেশ্য একালে খুবই সরল, তীব্র ও তীক্ষ্ণ। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত পরিবর্তিত সমাজ কাঠামোয় মানুষ এখন হিসেব করে চলতে শিখে গেছে। প্রযুক্তির প্রাগ্রসরতা ও দর্শনবোধের শূন্যতা তাদের এই চেতনায় মদদ দিয়েছে। জীবন এখন অনেকটা সিলেবাসকেন্দ্রিক। মুক্ত, অবাধ, উদ্দাম জীবনের স্বপ্ন এখন আর কেউ দেখেনা। আমাদের শিক্ষানীতিহীন শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্যও কতকটা তাই।

ইউরোপ-আমেরিকার সমস্ত সাফল্যের মূলে রয়েছে প্রাগমাটিক দর্শনবোধ দ্বারা পরিচালিত সেদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। ফ্রয়েবলের কিন্ডারগার্টেন ও মন্তেসরীর শিশু মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষণপদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ পাশ্চাত্যের শিশুদের মনে শিক্ষার প্রতি যে আগ্রহ সৃষ্টি করে তাকে নিপুণ পরিচর্যায় মহীরূহ করে তোলে প্রয়োগবাদী দর্শন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সাফল্যে তাদের কৃতিত্ব দেখে আমরাও উদ্দীপ্ত হয়েছিলাম। তাই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও সাজানো হয়েছিল প্রয়োগবাদী দর্শনের কথা মাথায় রেখে। স্বাধীনতার এত বছর পরে সেই উৎসাহ কোথায় মিলিয়ে গেল তা খোঁজা বড়ই দুষ্কর। আমাদের শিক্ষানীতিহীন শিক্ষাব্যবস্থা যে সামাজিক গহ্বরের সৃষ্টি করেছে তা থেকে উত্তরণ সুদূর পরাহত। অনেকে রাজনীতিকে দোষ দিয়ে একটি সরল সমাধানের পথে যেতে চান। কিন্তু রাজনীতিকদের ব্যর্থতা আমরা গলাধকরণ করবো কেন সে প্রশ্ন কেউ করেনা।

অবিমৃষ্যকারিতা, অর্থগৃধ্নতা, স্বার্থপরতা, ক্ষমতামদমত্ততার এক নিকষ কালো ফাঁদে নিজেরাই নিজেকে বন্দী করেছি। সামাজিক দায়বদ্ধতার আঙ্গিক সন্ধান করতে চাইনি। সময়ের বাস্তবতাকে মাথা পেতে মেনে নিয়ে সান্তনা খুঁজেছি। এই আত্মসমর্পণ তথা আত্মহত্যাকেও কাঙ্ক্ষিত বলে স্বীকার করেছি। যার প্রভাব নতুন সহস্রাব্দে প্রকটরূপ ধারণ করেছে। অন্তসারশূন্য মানবিক সম্পর্কের সূত্র ধরে আমরা বর্তমানকে রাঙাতে চাই। ভবিষ্যতের নৈঃসঙ্গপীড়িত দু:স্বপ্ন আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই ব্যক্তিক সমৃদ্ধি ও উদ্বৃত্ত স্বজনপ্রীতিই আমাদের সমস্ত কার্যকারণের পাথেয়।

কিন্তু এমন জটিল অবস্থা মোটেও কাঙ্ক্ষিত ছিলনা। যে স্বপ্ন ও উচ্চাশা বুকে নিয়ে ১৯৭১ সালে দেশটা স্বাধীন করা হয়েছিল তার সবই ম্রিয়মান হয়ে গেছে। সামাজিক উন্নতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক আত্মসম্মান, সাংস্কৃতিক বিকাশ এর আকাঙ্ক্ষা সবই বিফলে গেছে। আমরা আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের চেতনায় কোন অমৃতবৃক্ষের বীজ বপন করতে পারিনি। দায়সারা কর্মযজ্ঞের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছি নিজের মনের গোপন গভীর সত্যটিকে। কৃষিবিপ্লব ও অর্থনৈতিক উন্নতি দাঁড়িয়ে থেকেছে বক্তৃতাবাজির বারান্দায়। সামাজিক সংহতি পরিণত হয়েছে “বজ্র আটুনি ফস্কা গোরোয়”। আর এর সবকিছুর মূলে রয়েছে আমাদের ব্যর্থ শিক্ষাব্যবস্থা।

শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিরক্ষর, অজ্ঞ অভিভাবকের যে বোধ তাকে স্বীকার করতে আমাদের কোন দ্বিধা নেই। তারা নিজেদের আর্থসামাজিক অবস্থা থেকেই শিক্ষাকে অর্থ উপার্জনের বাহন হিসেবে মনে করে। গ্রন্থ তাদের কাছে বন্ধুত্বের বার্তা নয়, শ্রমিকের ব্যবহারোপযোগীতা নিয়ে উপস্থিত হয়। তারা গ্রন্থকে ব্যবহার করেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চায়। জ্ঞানের মূল্য পেটের ক্ষুধার কাছে সেখানে ম্লান হয়ে যায়। অস্বচ্ছল দ্বারে স্বচ্ছলতার আস্থা বহন করে শিক্ষা। এর বিপরীতে শিক্ষিতজনের আচরণও ততোটা ভিন্ন নয়। সাধারণভাবে মনে করা হয়ে থাকে শিক্ষিত মানুষ মাত্রই সচেতন। কিন্তু আমাদের সমাজ প্রমাণ করেছে শিক্ষিতজনের কপালে চিত্রিত এই অভীধাটি কতই না ভ্রান্ত।

বর্তমান বাস্তবতায় একটি শিক্ষিত দম্পতি সন্তান জন্ম হওয়ার আগেই তার জীবন ছক এঁকে ফেলেন। কোন কিন্ডারগার্টেনে সন্তানের শিক্ষাজীবন শুরু হবে, কোন বিষয়ে পড়লে তার উচ্চ আয় নিশ্চিত হবে ইত্যাদি। এভাবে নির্দিষ্ট ছকে সন্তানের জীবনরেখা আঁকা হয়ে যায়। শিক্ষার উদ্দেশ্য-লক্ষ্য সবই চাপা পড়ে যায় উচ্চাভিলাষের নীচে। সন্তানও অভিভাবকের কাছ থেকে শিখে নিয়ে শ্রেণী সচেতন হয়ে পরে। তার জীবন চলার পথ যে দেশের নিম্নবর্গীয় জনজীবনের থেকে আলাদা সে বিষয়ে সজাগ হয়ে যায়। জীবনের প্রতিটি বাঁকে তার উত্তরণ ঘটে ধাপে ধাপে। প্রতিযোগীতার তীব্র ট্রাকে অবস্থান ধরে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা তাকে অন্যকিছু ভাববার সময় দেয়না। নির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিমুখী ছুটে চলা তার প্রতিবেশ উপলব্ধি করার সময় ও সুযোগ কোনটাই দেয়না। ফলে বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও তার জানা থাকেনা সাহিত্য, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান তথা সামাজিক বিজ্ঞানের কোন বিষয়। ফলে তার মধ্যে মানবিক ও সামাজিক বোধের ততোটা বিকাশ ঘটেনা। বিপরীতে মানবিক বিদ্যার ছাত্ররাও অজ্ঞান থাকে বিজ্ঞানের সহজ সরল সূত্রগুলি সম্পর্কে। বিজ্ঞানের যে ছাত্রটি তার বিষয়ের জটিল সমীকরণগুলি অনায়াসে পরীক্ষার খাতায় লিখছে সে সামাজিক নিয়মেই বিষয়টি বোঝার জন্য, জানার জন্য বা উপলব্ধি করার জন্য চেষ্টা করেনা। পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পাওয়াটাই মুখ্য। বিষয়কে আত্মস্থ করা নয়। ফলে সামাজিক বিষয় পাঠহীনতা ও নিজের বিষয়ের প্রতি উপলব্ধিবোধের অভাব তাকে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে শেখায়না। মানবিক বিদ্যার ছাত্রটির অবস্থা তথৈবচ। সে নিজেও অবস্থার দাস। পাঠ্য বিষয়ের প্রতি সেও উদাসীন। জ্ঞানতৃষ্ণা তার মধ্যেও নেই। পরীক্ষায় পাশের জন্য; সাজেশনভিত্তিক যেটুকু পড়া প্রয়োজন তার বাইরের কোন বই পড়ার জন্য সে তেমন উৎসাহবোধ করেনা। উভয় বিষয়ের ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো বিনোদনের জন্য দু’একটা গল্প উপন্যাস পড়ে। কিন্তু জানার জন্য, চিন্তা করার জন্য যে পাঠাভ্যাস তা তার গড়ে ওঠেনা। মৌলিক কোন বিষয়কে আত্মস্থ করার উদ্যম সে অনুভব করেনা। সাজেশন অনুযায়ী সংগৃহীত নোটগুলোকেও বোঝার আগ্রহ তার নেই। কোনমতে মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে গিয়ে উগড়ে দিতে পারলেই সে তৃপ্ত। পণ্য সংস্কৃতির মায়াজালে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে গিয়ে সে কি হারিয়ে ফেলে তার তার অজানা থেকে যায়। এক দূরতিক্রমণ্য মোহাবিষ্ট জীবন সে নিরন্তর যাপন করে যায়। চরাচরের সৌন্দর্য তাকে হাতছানি দেয়না। নিরন্ন ছিন্নমূল মানুষের আর্তিও তাকে উদ্বিগ্ন করে না। আত্মরতির গ্লানি উপেক্ষা করে যাপিত যে জীবন তাই তার কাছে কাঙ্ক্ষিত ও বাঞ্চিত। নিষ্ঠা, অধ্যাবসায়, জিজ্ঞাসা, একাগ্রতা ইত্যাদি শব্দগুলো তার কাছে অর্থহীন ধ্বনি মাত্র।

জাতীর শারীরিক আয়তন সংখ্যায় বাড়ছে কিন্তু মেধাগত আয়তন সেই তুলনায় বরং অনেক ক্ষীণ। এর ফলাফল বিস্ময়কর কিংবা হতাশাবাচক হলেও অভাবিত নয়। বরং সূত্রানুযায়ী এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক, ভবিতব্য। বিজ্ঞানের ছাত্ররা শরীরে তাবিজ-কবজ-মাদুলী অথবা তার অলৌকিকে আত্মসমর্পণ কিংবা মানবিক বিদ্যার ছাত্রটির চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ধ্রুপদী সঙ্গীত অথবা কবিতা সম্পর্কে অজ্ঞতার চিত্র এখন আর মোটেও দুর্লভ নয়। এই দৃশ্য দেখে এখন আর কেউ চমৎকৃত হয়না যখন দুই ধারার শিক্ষিতজনেরা একত্রে বসে আধিভৌতিক কোন দার্শনিক(?) মতের সপক্ষে সেমিনার করছে। সেক্সপীয়র বলেছেন “এই পৃথিবীটা একটি নাট্যমঞ্চ মাত্র।” আমাদের চারপাশের নাট্যমঞ্চে যে নাট্যাবলী নিয়মিত মঞ্চায়ন হচ্ছে সেখানে পণ্ডিতেরা বসে আলোচনার নামে তর্ক করছেন, জাবর কাটছেন, একে অপরের পিঠ চাপড়াচ্ছেন কিংবা অন্য কারও নিন্দা করছেন। কোন সামাজিক তত্ত্ব ও তার সমস্যাবলীর সমাধানের চেষ্টা তাঁদের নেই। গবেষণা যা হচ্ছে তা এতই উচ্চমার্গীয় যে সাধারণের তাতে কোন অংশগ্রহণ বা প্রবেশাধিকার নেই।

ল্যাবরেটরিতে বসে বিজ্ঞানীরা যন্ত্রাংশ পরিষ্কার করছেন আর পাশ্চাত্যের কোন আবিষ্কারের গুণকীর্তন করছেন; মাঝে মাঝে কেরোসিন কুপি বা বিদেশী শৈবাল খাদ্যপোযোগ্যকরণ জাতীয় অভূতপূর্ব বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। বিজ্ঞানচেতনা বিকাশের চাইতে বিনাশে তাদের মনোযোগ বেশি। রেডিও, টিভি, ঔষধ, কম্পিউটার, নতুন শক্তি উৎপাদক যন্ত্র বা ইঞ্জিন এ ধরণের কোন মৌলিক আবিষ্কার করার মত ভাবনাগত উৎকর্ষ এদের নেই। জনজীবনের কাজে লাগে বা মানুষের দুর্ভোগ দূর হয় এমন কোন মৌলিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব স্বাধীনতাত্তোর কোন বাঙালির নেই। যা কিছু নতুন চিন্তা তা করা ও তার প্রায়োগিক উন্নয়ন সবকিছুর দায়িত্ব যেন শুধুমাত্র বিদেশীদের। আমাদের বিজ্ঞানীরা সাধারণ মানুষের মতো বিদেশী প্রযুক্তির ভোক্তামাত্র। নতুন প্রশ্ন বা পণ্যের উদ্ভাবন অনুসন্ধান কিংবা উন্নয়ন কোন কিছুর পিছনেই আমাদের বিজ্ঞানীরা তাঁদের মূল্যবান মেধা ও সময় ব্যয় করতে ইচ্ছুক নন।

দর্শনচর্চাতেও আমরা পিছিয়ে আছি। মৌলিক চিন্তাবিদ বলতে যা বোঝায় তেমন কোন চিন্তাশীল ধীমান স্বদেশে বিরল। দর্শনচর্চা দূরে থাক দর্শনবোদ্ধার সংখ্যাও অপ্রতুল। জ্ঞানের বিকাশ, চিন্তার মুক্তি ইত্যাদি শ্লোগানগুলো শ্লোগানরূপেই গৃহীত; প্রাত্যাহিক জীবনাচারের স্বাভাবিক বহির্প্রকাশরূপে নয়। কোন নতুন দর্শনতত্ত্বের উন্নয়ন, আলোচনা, বিকাশ, পরিশীলন কোন কিছুই আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী দর্শনতত্ত্বের যথাযোগ্য বিশ্লেষণ, পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন তো দূরের কথা। আসলে বাঙালির নিজস্ব দর্শন সত্যি কোন আছে কিনা তা অন্বেষণ করা কঠিন। অনেকে বাঙালির বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গের মধ্যে সীমানা টানতে চান। বহিরঙ্গের চিহ্ন বিব্রতকর হলেও বেশিরভাগ মানুষের অন্তরঙ্গে কোন মহান দর্শনের ফল্গুধারা বইছে তা এখন নিরূপন হয়নি। সাধারণ মানুষের মতো আমাদের দার্শনিক বলে পরিচিতরাও দার্শনিক সমস্যার অতলে ডুব দিয়ে মুক্তাটিকে খুঁজে বের করার মতো সদিচ্ছা পোষণ করেননা।

ললিতকলার ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে বিশাল এক শূন্যতা। চর্চাকারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও মনন এবং বুদ্ধিদীপ্তির মিশ্রণ বড়ই দুর্লভ। আন্তর্জাতিক হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে এমন সাহিত্যিক, চারু, কারু, নৃত্য, সঙ্গীত শিল্পীর সংখ্যা নিরাশাব্যঞ্জক। কালের নিরীখে উত্তীর্ণদের জ্যোতি ক্ষীণ হবার পথে। দু’একটি স্ফুলিঙ্গ চোখে পড়লেও তার উজ্জ্বলতা বড়ই সাময়িক। ললিতকলার কোন নতুন ধারা আমরা বিদেশ দূরে থাক জাতির পাতে এখনও উপস্থাপন করতে পারিনি। কোন নতুন চিন্তা-চেতনা, ভাবধারা, দিগন্ত আমরা উন্মোচন করতে পারিনি। জাতির বুকে কোন নতুন স্পন্দন, উদ্দীপনা সৃষ্টিতে আমাদের সাংস্কৃতিক দিকপালেরা প্রায়শ সফল হয়েছেন এমন মন্তব্য করা অনুচিত হবে।

আসলে আমরা যে তিমিরে ছিলাম, সেই তিমিরেই থেকে গেছি। সামগ্রিকভাবে আমাদের শিক্ষার মান এত নীচে নেমে গেছে যে আমরা বুঝতেই পারছিনা কোথায় চলেছি। কুয়োর ব্যাঙের মতো আমরা বারবার কুয়োর পরিমাণ ও আয়তন দিয়ে সাগরকে মাপার চেষ্টা করছি। কিন্তু দুটা নয়, দশটা নয়, লক্ষ কুয়ো দিয়েও যে সাগরকে মাপা যায়না এটাই চিরন্তন সত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন -“সত্য যে কঠিন সেই কঠিনেরে ভালবাসিলাম।” এই ঋজু এবং প্রখর সত্যটিকে স্বীকার করার মত সৎ সাহস বা বুকের পাটা আজ আমাদের বেশিরভাগ মানুষের নেই।

রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি, ব্যাবসায়ী এবং প্রান্তীয় মেহনতী মানুষের কথা বাহুল্যবোধে বাদ দেয়াই ভালো। তাঁদের কাছ থেকে আমাদের আশা করার কিছু নেই। তাঁরা অধিকাংশই সমাজ ব্যবস্থার দাস মাত্র। সমাজ যেমন চাইবে তাঁরা তেমন আচরণ করবে। তাঁদের দ্বারা মৌলিক, সৃষ্টিশীল ও গণমুখী কোন কাজ বিশ্বের ইতিহাসে খুবই কম। আমাদের যাবতীয় ভাবনা সচেতন বলে পরিচিত, আধুনিক বলে গর্বিত, শিক্ষিত বলে অভিমানতাড়িত মধ্যবিত্ত শ্রেণীটিকে নিয়ে। বিশ্বের বেশিরভাগ সভ্য দেশে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন সংকটে মধ্যবিত্ত শ্রেণী নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের দেশের অবস্থাও ভিন্নরূপ নয়। আমাদের মধ্যবিত্তদের যতটা আগ্রহ রাজনীতিতে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অন্যান্য বিষয়ে ততোটা নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দুর্যোগে মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে উঠে আসা দেশপ্রেমিকরা সংকট উত্তরণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন একথা সত্য। তবে এই একটিমাত্র ক্ষেত্রেই তাঁরা জনসমুদ্রে সমানভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই একটিমাত্র ক্ষেত্রেই তাঁরা বিপ্লবী বিদ্রোহীর ভূমিকা অনুভব করেছেন। আর সব ক্ষেত্রেই থেকে গেছেন নিষ্ক্রিয়, অবসন্ন, নিষপ্রভ। যেভাবে চলছে সেভাবে চলাকেই সার্থকতা ভেবেছেন। পরিবর্জন, পরিবর্ধন, পরিমার্জনকে ভেবেছেন বিকাশের অন্তরায় হিসেবে। এই সব ক্ষেত্রে বিপ্লবী-বিদ্রোহীর বিপরীতে অনুভব করেছেন দাসত্ব এবং আত্মসমর্পণের আনন্দ। তাঁরা ভুলে যান প্রাকৃতিক ও সামাজিক চিরন্তন সত্যটিকে। উইলিয়াম জেমস এর ভাষায় “নতুনত্ব প্রথমত ননসেন্স তারপর তাকে মানা হয় অবধারিত বলে, তারপর প্রাক্তন উপদেশকের উদ্ভাবনা হিসেবে প্রযুক্ত হয়।” কিন্তু আমরা তা বিশ্বাস করিনা, তাই মানিনা।

নতুন যুগের শিক্ষার্থীরা কাকে আদর্শ মানবে? বিপদে-সন্তাপে কার কাছে আশ্রয় পাবে- এমন ভাবনাগত দুর্বিপাকে অনবরত ঘুরপাক খেতে থাকে। সবকিছু দেখে-শুনে-বুঝে তারাও শিখে ফেলে প্রচলিত সামাজিক সূত্রটিকে। মরমী কবির বলা ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ কথাটি আজ ব্যর্থ হয়ে গেছে। আমরা স্বাধীনতাহীনতায় বাঁচতে চাই। বরং স্বাধীনতা আমাদের ভীত করে তোলে। নিজের লোভী মুখচ্ছবিটিকে চিনে ফেলে আমরা নিজেদেরকেই শত্রু ভাবি। এর চেয়ে পরাধীনতার সুবিধা অনেক। ত্যাগ-তিতিক্ষার ক্লেশ সহ্য করতে হয়না। ইডিপাসকে অন্ধ জ্ঞানী সত্য জানতে মানা করেছিলেন। কিন্তু ইডিপাস মানেনি। সত্য জানার তীব্র বেদনা তাকে সারাজীবন বহন করতে হয়েছে। ইডিপাসের দুর্ভাগ্য থেকে আমরা শিক্ষা নিযেছি। তাই আমরা সত্য জানতে ভয় পাই। আমাদের শিক্ষিতজনেরা এমনই শিক্ষিত যে তাঁরা পড়েনও না লেখেনও না। ‘পড়ালেখা’ শব্দবন্ধটি আমরা সবাই জানি কিন্তু মানিনা। কোন মননশীল গ্রন্থের কথা বাদ দিয়ে সাধারণ জনপ্রিয় ধারার উপন্যাসের বই বিশ ত্রিশ হাজারের বেশি ছাপানো হয়না। জনপ্রিয় এক লেখকের কোন একটি বই নাকি সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিল। এই একটিমাত্র উদাহরণ ছাড়া বেশিরভাগ গ্রন্থ পাঁচ-দশ হাজারের বেশি ছাপানো হয়না। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জীবনব্যাপী বই পড়েছেন কিন্তু একটাও বই লেখেননি। তাঁর মতে আমরা এখনও পঞ্চদশ শতকে বাস করছি। এমন পরিবেশে বই লেখা বৃথা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অসংখ্য বোর্ড স্ট্যান্ড এবং এ প্লাস সৃষ্টি করতে পারলেও পাঠক সৃষ্টি করেছে অনেক কম। হাতে গোনা যায় এমন সংখ্যায়। আমাদের শিক্ষার হার শতকরা চৌষট্টি ভাগ। কিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাটিও দুই লক্ষের বেশি ছাপানো হয়না। সব সহ প্রতিদিন বিশ লক্ষের বেশি কপি পত্রিকা ছাপানো হয়না। পত্রিকাগুলো তথ্য দেয়না বলে উপরে বর্ণিত অংকগুলো তথ্যনির্ভর নয়। কিন্তু এর আংশিক যদি সত্যি হয় তাহলেও আশা করার কিছু নেই। ১৪-১৫ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র বিশ লক্ষ জন পত্রিকা পড়েন কিংবা একটি মননশীল গ্রন্থ মাত্র দুই হাজার জন পড়েন এটা কোন আনন্দদায়ক চিত্র নয়।

শিক্ষার মনস্তত্ব অনুযায়ী শিশুরা বয়স্কদের দেখে অনেককিছু শেখে। তারা প্রতিমুহূর্তে কিছু না কিছু শেখে। অভিভাবক, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, স্কুল শিক্ষকসহ বিভিন্ন বয়স্ক ব্যক্তির আচরণ গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করে। বয়স্কদের মতো আচরণ করে নিজেকেও বড় ভাবতে চায়। এটা শিখনপদ্ধতির একটা অংশও বটে। আমাদের শিশুরা আমাদেরকে দেখে-বুঝে অনেককিছুই শিখে ফেলেছে। তাদেরকে তাই এককভাবে দোষারোপ করাটা অনুচিত হবে।

এখন সময় এসেছে শুদ্ধ, শোভন, মানবিক জীবনযাপনের যে ঐশ্বর্য তা অনুভব করার। বিদেশী দর্শন, বিদেশী আদর্শ, বিদেশী তত্ত্ব, বিদেশী প্রযুক্তি তথা সকল বিদেশী পণ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের সমগ্র স্বরূপকে চিনতে হবে। শুধু রাজনীতি নয় দর্শন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি বিভিন্নরূপে সাম্রাজ্যবাদ নিজের শ্বদন্ত প্রকট করে। শিক্ষার্থীদেরকে এর স্বরূপ সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন করে তুলতে হবে। তাদেরকে নিজ সংস্কৃতির রত্নভাণ্ডারের খোঁজ জানাতে হবে।

দেশের মেধাবীরা বিদেশে গিয়ে সাফল্য দেখান কিন্তু স্বদেশে নয়। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। স্বদেশে তাদের নিষ্ক্রিয়তা, ম্রিয়মানতা, তথা মেধাহীনতার উৎসমূল চিহ্নিত করতে হবে। বিজ্ঞানচেতনাহীন, সামাজিক দায়হীন কোন মানুষ যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত নন। তার শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিফলে গেছে। উপনিষদে আছে “সা বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে”। আমাদের বিদ্যা আমাদেরকে অজ্ঞানতা, কুসংস্কারপ্রবণতা, পশ্চাৎপদতা, আধিভৌতিকতা, সাংস্কৃতিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেনি। আমরা এখনও মধ্যযুগে বাস করছি। মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনা লালন-পালন করছি এবং আত্মগৌরবরূপ আত্মপ্রসাদে তৃপ্ত হচ্ছি। এক মহাকালিক নিদ্রায় আসমাজ ডুবে আছি। এটা যে নতুন সহস্রাব্দ এবং এই সহস্রাব্দের দিগন্ত যে ভিন্ন হবে এটা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। নতুন সহস্রাব্দের কোলাহল আমাদেরকে জাগ্রত করেনি। অতীতের স্বপ্নে বিভোর থেকে সমকালের সমস্যাকে উপেক্ষা করছি।

আমাদের এখন বিজ্ঞানমনস্কতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিকাশ ঘটাতে হবে। নিজের জীবনাচারণের মৌলিকত্ব তুলে ধরতে হবে নতুন প্রজন্মের সামনে। উদার ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি মর্মের গভীরে লালন করতে হবে। মানবিক বোধ দিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে প্রজন্মান্তরের কলরবকে। বিবেকবোধের শক্তিতে আত্মপ্রত্যয়ে উজ্জীবিত হতে হবে। মনের সৌন্দর্য দিয়ে দূর করতে হবে জগৎসংসারের শরীরে লেগে থাকা সমস্ত কালিমাকে। নিজেদের জাতিগত স্বাতন্ত্র্যকে অনুভব করা আসলে এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজন। হাজার বছরের এক ঐতিহ্যিক পথ পরিক্রমার শেষে বাঙালি জাতি এসে দাঁড়িয়েছে নতুন সহস্রাব্দের দরজায়। চর্যাপদের বহু আগেও এই জাতির অস্তিত্ব ছিল। আচরণে, অভীজ্ঞায় তাদের যে বোধ তা ছিল অন্যদের চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা। চর্যাপদের যুগে তাদের জীবনযাত্রায় একটি অন্তর্লীন ঢেউ একটি স্বাজাত্যের সুর তোলে। এরপর দীর্ঘ কাল পরিক্রমা শেষে বাঙালি একটি সার্বভৌম স্বদেশের মালিকানা পায় ১৯৭১ সালে এসে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা একটি স্বতন্ত্র ও সংহত পরিচিতির অধিকারী হই। হাজার বছরের অর্গল নিমেষেই খুলে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ‘সুশিক্ষিত’, ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দগুলি প্রত্যেকটিই আমাদের কাছে অধরা থেকে যাচ্ছে। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বুকের গভীরে ধারণ করার যে শক্তি তা আমরা বহন করতে পারিনি।

পাকিস্তানীদের নৃশংস তাণ্ডব ১৯৭১ এ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। সাংস্কৃতিক কারণে তারা আমাদের সবাইকে খুন করতে চেয়েছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশের সবকটা বাঙালিকে হত্যা করে ভূখণ্ডটিকে দখল করার। সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে আমরা তাদের চাইতে স্বতন্ত্র এবং শ্রেষ্ট ছিলাম (এখনও আছি) বলে তারা আমাদেরকে ১৯৪৮ সাল থেকে সহ্য করতে পারতো না। আমাদের খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমের ফসল দিয়ে কেনা অস্ত্র তাক করেছিল আমাদের বুকের দিকেই। আমরা আত্মসমর্পণ করিনি। প্রতিবাদ করেছি, প্রতিরোধ গড়েছি। নিজের স্বকীয়তাকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছি। মাথা উঁচু করে গর্বভরে চীৎকার করে বিশ্বসভায় জানিয়েছি আমাদের দেশের নাম ‘বাংলাদেশ’। সশস্ত্র যুদ্ধে হিংস্র পাকিস্তানীরা আমাদেরকে পরাজিত করতে পারেনি। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর কালে আমরা নিজেরাই নিজেদের কাছে হেরে গেছি। একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মের সামনে কোন আদর্শগত দার্শনিক চেতনা তুলে ধরতে পারিনি। একাত্তর আমাদের সামনে দেশপ্রেমের যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিল তা তাদেরকে উপলব্ধি করাতে ব্যর্থ হয়েছি। একটি সৃষ্টিশীল জাতি থেকে পরিণত হয়েছি ভোক্তা জাতিতে। আমাদের খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা পরিণত হয়েছে ভিক্ষার ঝুলিতে। আর আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এর জন্য কোন সতর্কবার্তা বহন করেনি। শিক্ষার্থীরা তথা তরুণ প্রজন্ম বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান প্রভৃতি সম্পর্কে অসচেতন থেকে যাচ্ছে।

মুক্তচিন্তা, জ্ঞানতৃষ্ণা, দেশপ্রেম, মানবিক ভালোবাসা, সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা প্রভৃতি শুভচেতনাগুলো প্রজন্মের মনন থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে; চলছে মূল্যবোধের ক্রান্তিকাল। বরং অজ্ঞতা, পশ্চাৎপদতা, মানসিক বিচ্ছিন্নতা, নিয়তিবাদ, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি অশুভ দানবের দম্ভ বাড়ছে। এক বিরাট মানবিক বিপর্যয়ের দিকে আমরা প্রতি পদে পদে এগিয়ে যাচ্ছি। এক বিরাট দুর্যোগ আমাদেরকে গ্রাস করার জন্য মুখব্যাদান করে বসে আছে। এখনই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে; শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

No comments:

 
উপরে ফিরে আসুন