Thursday, February 10, 2011

২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিয়ো ভার্গাস য়োসা'র টেলিফোন সাক্ষাৎকার

মারিয়ো ভার্গাস য়োসা'র টেলিফোন সাক্ষাৎকারআমি সম্মানিত হব বা প্রতিদানের অন্তর্নিহিত প্রতিফল পাব
অনুবাদ: সুশান্ত বর্মন


২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন পেরুবাসী স্প্যানিসভাষী সাহিত্যিক মারিয়ো ভার্গাস য়োসা (Mario Vargas Llosa)। নোবেল কমিটি তাঁকে তাঁর সারা জীবনের সাহিত্যকর্মের জন্য পুরস্কার দিয়েছেন। প্রথা অনুযায়ী পুরস্কার ঘোষণার পরপরই নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্বদের একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার টেলিফোনে নেয়া হয় এবং তা নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও ভার্গাস য়োসার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে এ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith)।

মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যালো
এ্যাডাম স্মিথ: ও, হ্যালো, আপনি কি মারিও ভার্সাগ য়োসা?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যা, বলছি।
এ্যাডাম স্মিথ: ওহ!, হ্যালো আমার নাম এ্যাডাম স্মিথ। আমি স্টকহোমের নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইট থেকে বলছি। পুরস্কারের খবরের জন্য আমার অভিবাদন গ্রহণ করুন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, তাহলে এটা সত্যি ছিল? হা! হা!
এ্যাডাম স্মিথ: হা! হা! এটা একেবারে নিশ্চিত...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: কারণ, আমি একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে একটা ফোন পেয়েছিলাম। বন্ধুর করা কৌতুক নাকি সত্যি তা ভেবে আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে, এটা স্টকহোমের জনসম্মুখে কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা করা হল।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: এটা ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়ে গেছে? ভাল। আমি খুব উত্তেজনা ও গর্ব বোধ করছি। আচ্ছা, আমি জানিনা কি বলতে হবে। আমি অভিভূত, সত্যি!
এ্যাডাম স্মিথ: সুন্দর বলেছেন। কয়েক বছর ধরে আপনার নোবেল পুরস্কার পাবার কথা শোনা যাচ্ছিল। পুরস্কার পেয়ে যাবার বিষয়টি তাহলে কেমন, আপনি কি জানেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা আপনি জানেন, এটা আমি জানি। কিন্তু বিশ্বাস করি না। পত্রিকায় আমাকে এটা পড়তে হবে।
এ্যাডাম স্মিথ: অবশ্যই, হ্যা, লিখিত রূপ পেলেই এটা বাস্তবরূপ পেতে পারে। আমাদের আছে...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি হৃদয়ের গভীরে আলোড়ন বোধ করছি এবং এটা সত্যি অকল্পনীয় উৎসাহব্যঞ্জক। এবং, খোলাখুলি বলি আপনি জানেন- আমি এটা আশা করিনি। আমি কখনোই বিশ্বাস করিনি যে, সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রত্যাশীদের মধ্যে আমার নাম ছিল এবং , কিন্তু, যাহোক, এটা সত্যিই কল্পনাতীত ঘটনা এবং আমি খুব বিস্ময় বোধ করছি। খুব অবাক হয়ে গেছি।

লেখালেখি করা আমার জীবনে এমন স্বপ্নীল আনন্দ এনে দেয় যে, এর জন্য আমি সম্মানিত হব বা প্রতিদানের অন্তর্নিহিত প্রতিফল পাব- তা কখনও বিশ্বাস করিনি।
এ্যাডাম স্মিথ: আমার আন্তরিক অভিবাদন গ্রহণ করুন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: যাহোক, একাডেমির সদস্যদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দেবেন।
এ্যাডাম স্মিথ: অবশ্যই। একটি সংক্ষিপ্ত টেলিফোন সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার জন্য আপনার সাথে কয়েক মিনিটের জন্য ফোনে থাকতে পারি কি?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যঁ, অবশ্যই।
এ্যাডাম স্মিথ: ধন্যবাদ। আমি জেনেছি যে আপনি শিক্ষকতার কাজে এই মুহূর্তে প্রিন্সটনে আছেন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি নিউইয়র্কে থাকি কিন্তু প্রিন্সটনে পড়াই। আমি সোম এবং মঙ্গলবার শিক্ষকতার কাজে ব্যয় করি। কিন্তু আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি নিউইয়র্কেই থাকছি।
এ্যাডাম স্মিথ: ঠিক আছে। আপনি বিভিন্ন জায়গায় বাস করেছেন। আপনি পেরুর নাগরিক।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি লিমা [ফোন লাইনে সমস্যা] ও মাদ্রিদে বাস করি। বেশিরভাগ সময় লিমা ও মাদ্রিদে থাকি।
এ্যাডাম স্মিথ: এবং আমি এটা জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি যে জায়গায় বাস করেন, তা কি আপনার লেখার ভঙ্গিতে কোন পরিবর্তন আনে? কারণ এটা, কোন কিছুতে.....
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ওহ, আমি তা মনে করিনা। আমি... না... আমি, আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে লিখেছি, কিন্তু, আহ!, আমি না... কোন নির্দিষ্ট জায়গা সম্পর্কে লেখার জন্য আমি ভ্রমণ করেছি। কিন্তু আমার কাছে যে গল্পটা আছে, পরিবেশের প্রভাবে তার ধরন পাল্টে যাবে এমনটা আমি মনে করি না... কিন্তু, হয়তো, হ্যাঁ, হয়তো, কিন্তু, খুব সচেতনভাবে তো না। হয়তো অসচেতনভাবে। হ্যাঁ, আমি যেখানেই যাই, থাকি, সে জায়গাগুলো আমাকে সমৃদ্ধ করে। আমি, আমি জানিনা [ফোন লাইনে সমস্যা]
এ্যাডাম স্মিথ: ভাষার বিষয়টা কি? কারণ... এর সম্পর্কে...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ভাষা, বিদেশে বাসরত জীবন আমাকে প্রভাবিত করে যেমন ধরুণ ভাষা স্পেনীয়দের সাথে আমার যে সম্পর্ক তাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আমি মনে করি স্পেনীয় ভাষার সাথে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ভাষার যে সাপে নেউলে সম্পর্ক তার প্রেক্ষিতে আমি নিজের ভাষাকে ভালমত বুঝতে পেরেছি। আহ, আমার ধারণা, প্রত্যেক ভাষাকেই যে একই ভাবনা প্রকাশ করতে হয়, তার সূক্ষ্ম তারতম্য সম্পর্কে আপনি সচেতন। আমি মনে করি এই সম্পর্কে [ফোন লাইনে সমস্যা] নিজের ভাষার সাথে আমার সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়েছে, কারণ স্পেনীয় ভাষা জাতীয় ভাষা নয়, এমন একাধিক দেশে আমি বসবাস করেছি। আপনি এটা জানেন।
এ্যাডাম স্মিথ: আপনি অনেক প্রকারের লেখা লিখেছেন। আপনার রচনাগুলোর প্রকারভেদ অস্বাভাবিক রকমের বেশি। এরকম হয়েছে কেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, আমি উপন্যাস লিখি এবং, আহ, কিন্তু আমি জানি আমি অলীক কাহিনীর লেখক, আপনি জানেন, কারণ আমি নাটক অথবা ছোটগল্পও লিখেছি। কিন্তু, আহ, আমি বিশ্বাস করিনা যে, বিভিন্ন রকমের লেখা উদ্দেশ্যকে বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে দেয়। এই অনুভূতিটাই আমি আমার গল্পগুলোতে বলতে চেয়েছি।

কিন্তু আমি জানি এমন কিছু গল্প নাটকে, পরে উপন্যাসগুলোতে কিংবা ছোটগল্পে বর্ণিত অথবা উপস্থাপিত হয়েছে যে, অন্য প্রসঙ্গে [ফোন লাইনে সমস্যা] অন্য কথায় বললে বলা যায়, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি মনে করি উপন্যাস হল সেইসব কথাকে বলার একটি আদর্শ পন্থা। তাই না?
এ্যাডাম স্মিথ: হ্যাঁ, এবং আমি কি রাজনীতির প্রতি আপনার আগ্রহ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারি? আপনি বলেছেন যে এক প্রকারের দায়বদ্ধতা থেকে আপনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। এটা কি ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা নাকি লেখকের দায়বদ্ধতা?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, আপনি জানেন, যখন আমি.... আমি, আমি মনে করি লেখকরাও নাগরিক। আপনি জানেন এবং যে বিতর্কে সমাজ মুখোখুখি হয়েছে এমন কোন সমস্যার সমাধান খোঁজা হয় এধরণের নাগরিক বিতর্কে অংশ নেবার মত নৈতিক দায়বদ্ধতা আপনার আছে। এর মানে এই নয় যে, আমি মনে করি লেখকদেরকে পেশাদার রাজনীতিক হতে হবে। না আমি কখনো ভাবিনি, আমি কখনো পেশাদার রাজনীতিবিদ হবার কথা ভাবিনি। পেরুর অবস্থা খুব খুব সংকটজনক হবার কারণে আমি একবার রাজনীতি করেছিলাম। মুদ্রাস্ফীতি, সন্ত্রাস, গৃহযুদ্ধ দ্বারা দেশ আক্রান্ত ছিল। আমার দৃঢ় ধারণা হয়েছিল যে, আমাদের এই ভঙ্গুর গণতন্ত্র [ফোন লাইনে সমস্যা] ধ্বসে পড়ার মুহূর্তে এটা ছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে সেটা ছিল। কিন্তু আমি এটা খুবই অসাধারণ কিছু হিসেবে করেছি। আমি খুব ভালভাবে জেনে করেছি যে এটা যা ছিল, তা এক স্বল্পস্থায়ী অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু অন্যভাবে বললে, আমি, .... আমি, আমি মনে করি লেখকদের বাকী নাগরিকদের মতো নাগরিক সমস্যা বিষয়ে অংশগ্রহণ করা উচিত। নয়তো আপনি পারবেন না... আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন না। আপনি অংশ নিতে পারবেন না [ফোন লাইনে সমস্যা] আপনি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্র হল অংশগ্রহণ। আমি বুঝতে পারিনা অংশগ্রহণের নৈতিক দায়িত্ব থেকে লেখকরা, শিল্পীরা, বুদ্ধিজীবীরা কেন মুক্ত থাকবেন।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা একটি শেষ প্রশ্ন। এই ঘোষণা আপনাকে কখনো পড়েনি এমন নতুন পাঠকমণ্ডলীর সাথে পরিচিত করিয়ে দেবে। আপনি কি শুরু করার জন্য কোন একটি নির্দিষ্ট বইকে সুপারিশ করবেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ওহ! আচ্ছা, হা! হা! আমি জানিনা। আমার ধারণা... আহ... আমি সত্যিই জানিনা, কিন্তু, হয়তো... না! আমি বলতে পারব না। আমি বলতে পারব না।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, ঠিক আছে, সেটাই ভাল। হ্যাঁ, তাদেরকে নিজেদের পছন্দের জন্য ছেড়ে দিন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: খুবই ভাল, স্যার।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, আপনাদের সাথে কথা বলে ভাল লাগল।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এ্যাডাম স্মিথ: অভিনন্দন। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। বিদায়।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: বিদায়।

১৩ অক্টোবর, ২০১০ খ্রি.
Read More ... »

Thursday, October 15, 2009

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ০৯ প্রাপ্ত Herta Muller এর টেলিফোন সাক্ষাৎকার


অনুবাদ: সুশান্ত বর্মন

"ভাষার নিজের দৃষ্টি আছে"

ঐতিহ্য অনুযায়ী 0৮ অক্টোবর ২০০৯ এ ঘোষণার পরপরই সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত Herta Muller এর একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। পুরস্কার ঘোষণার কয়েকমিনিটের মধ্যেই সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করা হয়। হার্তা মুলারের মাতৃভাষা জার্মান ভাষায় সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক Marika Griehsel

Herta Muller: হ্যালো
Marika Griehsel: মিস মুলার আপনাকে অভিনন্দন। আমার নাম Marika Griehsel, আমি নোবেল ফাউন্ডেসনের ওয়েবসাইট অফিস থেকে বলছি। আবারো আপনাকে আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন জানাই।
HM: ধন্যবাদ।
MG: আপনি জার্মান ভাষায় লেখালেখি করেন। কোন এক সময় আপনি বলেছিলেন যে লেখালেখি করা আপনার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অস্তিত্বের মতো।
HM: হ্যাঁ, আসলে লেখালেখির জায়গাটা এমন যে সেখানে আমি আমার মতো করে সবকিছু করতে পারি। কারণ স্বৈরশাসনের নীচে...... এবং, আচ্ছা, এটা আমাকে কিছু বিষয়ের অধিকারী করেছে.... কিন্তু আমি যখন কাজ করি এটা তখন অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়....... যাখন আমার একটি কাজ ছিল..... যখন আমি বহিষ্কৃত হচ্ছিলাম ...... সব জায়গা থেকে। এবং আমি নিরন্তর প্রতারণার শিকার হচ্ছিলাম। জেরার পর জেরা করে আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছিল। লেখালেখিটা কখনও কখনও কিছুটা উন্মাদন বটে, কারণ আমাদের দেশ এত গরীব যে, আমরা প্রত্যেকেই এতবেশি অসুখী জীবন দেখেছি, প্রত্যেকের চিন্তাই আমাদের নিজের চিন্তা। হ্যাঁ, এটা এমন এক যাত্রা যা সত্যিই ছিল ... পৃথিবীতে অবশ্য এর কোন স্থান ছিল না।
MG: কিন্তু এটা এমনভাবে হয়েছে আপনি ঘটনার যে পাশ দেখতে চেয়েছেন, আপনাকে সেই মতো কাজ করতে হয়েছিল। ছিল কি?
HM: তাহলে আমি কখনই এতটা নিশ্চিন্ত হবো না যে আমি এখনও টিকে আছি, আর আমি ছিলাম।
MG: আপনি ১৯৮৭ সালে জার্মানীতে থাকার জন্য গিয়েছিলেন।
HM: হ্যাঁ
MG: কিন্তু আপনি পুরনো দেশকে নিয়ে নিজেই চলেছেন। এটা কেন? আপনি কি মনে করেন?
HM: আচ্ছা, আমি মনে করি সেই ভার... সাহিত্য ঠিক যেখানে ভারী লাগছে সেখানে পৌঁছে যায়। এবং আমি ত্রিশ বছর ধরে স্বৈরশাসনের নিচে বাস করেছিলাম এবং এটাই হল সেই জায়গা যেখানে ক্ষত তৈরি হয়ে গেছে এবং সেই পরিবেশ ছিল....আমি নিজে এই জীবন পছন্দ করে নেইনি, সেই গুমোট পরিবেশ বরং আমাকেই খুঁজে বের করে নিয়েছে। এধরণের পরিবেশ আমি কখনই চাইবো না.... আমি এখনও এই জীবনে সওয়ার হইনি। আর যা সবসময় মাথার উপর, জীবনের উপর চেপে বসে থাকে, তাকে লিখে ফেলা উচিত এবং এটা গুরুত্বপূর্ণ, স্বৈরশাসক... দুর্ভাগ্যক্রমে এই স্বৈরশাসন শেষ শাসন নয়। দু:খজনক হল এই পৃথিবীতে এখনও অনেক স্বৈরশাসন আছেন।
MG: কখন থেকে আপনি লেখা শুরু করেছেন? কার জন্য আপনি লিখেছিলেন, এখন কার জন্য লিখছেন?
HM: আসলে আমি সবসময় নিজের জন্য লিখেছি। বিষয়কে ব্যাখ্যা করার জন্য, আমার নিজের সাথে বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা ব্যাখ্যা করার জন্য। এক অন্তর্গত পদ্ধতিতে বিষয়টি বোঝার জন্য, আসলে কি ঘটছে, তা জানার জন্য। অথবা, আমার ঠিক কি ঘটেছে? আমি বেশ ছোট একটা গ্রাম থেকে এসেছি, তারপর শহরে এসেছি। সেখানে সবকিছু বাধাহীন থাকেনি, একসময় আমি সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে গেলাম। জার্মান-- নিজেকে কেউ আর মনে করছিল না। এটাই আমার স্বদেশবাসীর সাথে অমিল হবার প্রধান কারণ। যখন আমি প্রথম বই লিখি তখন জার্মান সংখ্যালঘু পরিচয়ের কারণে আমি বহিষ্কৃত হলাম। এবং যারা নোংরামী ছড়াতে পছন্দ করে, তারাও একই কথা বলেছিল। কারণ আমি জাতীয় সমাজতন্ত্রে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে লিখেছিলাম এবং আদিম, প্রত্নতাত্ত্বিক গ্রামীন সমাজের কথা এবং এর জাতিবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে এবং সেজন্য তারা আমাকে কখনও ক্ষমা করেনি।
তারা, তাদের জন্মভূমি "Heimatliteratur" সম্পর্কে সাহিত্য চেয়েছিল, এরা খুব গোঁড়া সংখ্যালঘু আর এজন্য আমি বহিষ্কৃত হয়েছি। এবং রাজনৈতিক কারণে আমি রুমানিয়ার সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে গিয়েছিলাম। এবং তারপর আমি জার্মানীতে চলে এসেছি। আর এই জার্মানীতে আমি সবসময় রুমানিয়ান থেকে গেলাম। এভাবে একে অপরের জন্য থেকে গেছে....
MG: হ্যাঁ, তা সত্যি। এটা কি গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনি ভাবেন, আপনি অনুভব করেন যে আপনি সীমানার ওপারে থেকে গেছেন।
HM: এটা গুরুত্বপূর্ণ কি না তা আমি জানিনা। এটা ছাড়াও যে কেউ বেঁচেবর্তে থাকবে। কখনও কখনও এটা আঘাত করে। মানুষ কিছু কিছু বিশ্বাসের কারণে একে শ্রদ্ধা করে, কিন্তু এটা আসলে তাই যা এটা ছিল এবং আমি নিয়মিতভাবে একে সাথে নিয়ে চলতে বাধ্য হয়েছি, এবং এটাই সেটা যা এটা ছিল। আর কেউ মানুষের উপর কাউকে জোর করে ঠেলে দিতে পারবে না এবং মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রতারনা করবে না। আমার মনোভাব এবং আমার ভাবনার কারণে আমি এসবকে বহন করি না। কেউ কি করতে পারে? কেউ পিছন দিকে বাঁকা হতে পারবে না, অথবা যার অধিকারী নয়, সেই পরিচিতিকে ধারণ করতে পারবে না, এবং কোন অবস্থাতেই এটা কাজ করবে না। যখন তুমি মুক্ত হবে, তখনই এসব শেষ হবে।
MG: আপনার জন্য সাহিত্য.... লেখালেখি..... কাউকে সৎ থাকতে বাধ্য করে?
HM: হ্যাঁ, প্রত্যেকের নিজের কাছে সৎ থাকা উচিত। লেখার মাধ্যমে তুলে আনা অনুভূতিকে আমরা পঞ্চোন্দ্রিয় দিয়ে যে অভিজ্ঞতাকে অর্জন করেছে, তার চাইতে আলাদা হতেই পারে কারণ ভাষা একটি আলাদা উপাদান। আর এরকম একটি বষয়ে লেখালেখি করা প্রত্যেকে এই লেখালেখি করাকালনী নিজেকেই অনুভব করে। যখন কেউ লিখতে থাকেন তখন কেমন দেখায়, তা লেখালেখি নিজে জানেনা। যখন শেষ হয় তখনই তা বোঝা যায়। এবং যতক্ষন আমি লিখি, ততক্ষণ আমি নিরাপদে থাকি, তারপর জীবনকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে কিছু ধারণা আমি পেয়ে যাই আর যখন রচনার শেষে পৌঁছে যাই, তখান আর কিছুই আমি মনে রাখি না।
MG: "Atemschaukel" (নিঃশ্বাস/ করাতের যাওয়া আসা) শব্দটি শুনতে সুন্দর। এটাকে কি আপনি জটিল বলে মনে করেন? আপনি কিছু জার্মান মানুষকে চেনে, যারা বন্দী হয়ে গেছে। তাদেরকে কেউ তেমন পছন্দ করে না, করে কি? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর তাদের সম্পর্কে কেউ ভাবে না... একথা বলতে আপনি কি বুঝিয়েছেন?
HM: হ্যাঁ, আচ্ছা...... ১৯৪৫ সালের পরের নির্বাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে প্রাকৃতিকভাবেই যদি কিছু করতে পারতো।
ওহ, দরজায় বেল বাজছে। বাড়িতে কিসব পাগলামী শুরু হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে সামনের দরজায় এসে গেছে।
আচ্ছা, এস এস অথবা জার্মান আর্মিতে থাকা জার্মান সংখ্যালঘুরা সংশ্লিষ্ট ছিল, এমন কিছু যৌথ অপরাধের কারণে তারা নির্বাসিত হয়েছিল। অ্যানটোনেস্কুর আমলে রুমানিয়া একটি অত্যাচারী রাস্ট্র ছিল।
একটু থামুন, আমি ফোনে কথা বলতে পারছিনা, আমার এক বন্ধু, ওহ, আমি তোমাকে বুঝতে পারছি না।
MG: আচ্ছা ঠিক আছে, আমি মনে করি খুব তাড়াতাড়ি একটি বিরাট পার্টি শুরু হতে যাচ্ছে। আপনি বলেছেন 'যৌথ অপরাধ', তাড়াতাড়ি বলুন।
HM: হ্যাঁ, আমার মতে যৌথ অপরাধী সাব্যাস্ত করা সবসময় ন্যায্য নয়, কারণ যারা নির্বাসিত হয়েছে তারা পরে আর যুদ্ধ করেনি। ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাসন সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু মে মাসের শেষেও যুদ্ধ থামল না। আমার বাবা SS তে ছিলেন। তিনি যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেননি। অতএব তারা সাধারণ মানুষকে ধরা শুরু করল। একেবারে তরুন যারা তাদেরকে ধরল। ১৭ বৎসরের তরুন যেমন অস্কার প্যাস্টরকে তারা ধরে নিয়ে গেল। অথচ সে নিজে দোষী নয়। হিটলারের পাশাপাশি রুমানিয়ার অ্যানটনেস্কুর কারণে রুমানিয়া একটি অত্যাচারী রাষ্ট্র ছিল। এই রাষ্ট্র একেবারে শেষ সময়ে অবস্থান পরিবর্তন করেছিল। অথবা সোভিয়েত রুমানিয়ার অবস্থান পরিবর্তন করে দিয়েছে বলে সে নিজেও পরিবর্তিত হয়েছে। এবং এই কারণে 'জাতীয় সমাজতন্ত্রে'র সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বিষয়ে জার্মান সংখ্যালঘুরা অনমনীয় থেকে গেছে। এবং রুমানিয়ানরা সবাই অ্যনটনেস্কুর সাথে স্টেলিনগ্রাদে থেকে গেছে, এবং তারপর, ১৯৪৫ এর পর শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হর্থি (Horthy) কে নিয়ে এবং হিটলারের সমর্থক হিসেবে জার্মানরা, কিন্তু রুমানিয়ার সমস্ত জনগণ সে সময় নাজী জার্মানীর পক্ষে ছিল। তারপর, ১৯৪৫ এর পর ইতিহাস ভুলভাবে লেখা হয়েছে।
হ্যাঁ, আমার মাকেও ৫ বৎসরের জন্য নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এসব বিষয়কে আমি ঘটনার অংশ বলেই মনে করেছি। প্রত্যককে বুঝতে হবে যে, যদি নাৎসী জার্মানী এ ধরণের কোন অপরাধ না করতো, তাহলে নির্বাসন বলতে কোন কিছু থাকতো না। কাউকে এটা মনে রাখতে হবে যে, এটা এখন পর্যন্ত চলে আসেনি। সংখ্যালঘুরা যে অপরাধে অপরাধী ছিল, এটা তার ধারাবাহিকতা।
MG: আপনি কি মনে করেন? আপনার বই এখন রুমানিয়ার ভাষায় অনুবাদ করা হবে। আপনাকে সেখানে কিভাবে স্বাগতম জানানো হতে পারে?
HM: আচ্ছা, এটা পার্থক্য হবে। সাধারণভাবে বলা যায়, বেশ সহজভাবেই বইগুলো গ্রহণ করা হবে। কিন্তু এটাই একমাত্র দিক নয়। হয়তো যদি কেউ কোন একটি বই রিভিউ করার জন্য নির্বাচন করে, তাহলে হয়তো সে একইরকম হবে। অবশ্য আমি রোমানিয়ার সমাজে বিশেষভাবে প্রশংসিত নই। আমি কখনও কোন আমন্ত্রণপত্র পাইনি। কারণ আজ পর্যন্ত রুমানিয়ার অনেক খারাপ দিক আমার বলা আছে কারণ এটা যেমন, আমি ঠিক তাই বলি। পুরনো nomenklatura এবং গোয়েন্দারা দেশের সকল অবস্থানকে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত করেছে। এটা আসলে সর্বব্যাপী এক নেটওয়ার্ক। তারা নিজেদেরকে এবং পরস্পরকে সাহাযর্ করে। রোমানিয়াতে দূর্নীতি এত বিকট আকার ধারণ করার এটা একটা কারণ, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে গণতন্ত্র থেকে রুমানিয়া এখনও অনেক দূরে আছে।
রুমানিয়াতে যা আছে সে সম্পর্কে কোন কিছু শুনতে তারা রাজী নয়। এটা একটা চিরকালীন সমস্যা। যারা নির্বাসনে রয়েছে তাদেরকে নিজের জিহ্বাকে সংযত করতে হবে, এবং তাদেরকে এটা বলতে হবে যে -"আমি এই বিষয়ে কোন কিছুই আর জানিনা"।
MG: আপনার ভাষা জার্মান, কিন্তু এখানে কিছু রুমানিয়ার ভঙ্গি মিশে গেছে। এটা কিভাবে এত দৃশ্যমান হলো?
HM: আচ্ছা, আমার মাতৃভাষা হল জার্মান। আমি পরে, যখন আমার বয়স ১৫, শহরে থেকে রুমানিয়ার ভাষা শিখেছি। আমি শিখতে চেয়েছিলাম। এই ভাষাকে আমি খুব ভালোবাসি। রুমানিয়ার ভাষা খুব সুন্দর, আবেগপ্রবণ, কাব্যিক ভাষা। হয়তো পরে শেখাটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। কারণ এই ভাষঅর জন্য এতদিনে আমার একটা চোখ তৈরি হয়েছে।
আমি বুঝতে পেরেছিলাম কল্পনার জগতে রুমানিয়ার ভাষা ঐশ্বর্যবান। নানারকম আকর্ষণীয় পরিবর্তন এই ভাষায় সম্ভব। ভাষার এসব পরিবর্তিত রূপ মানুষ প্রতিদিন অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস বা নিজেকে প্রকাশ করতে গিয়ে ব্যবহার করে। নানারকম পরস্পরবিরোধীতা আছে। গাছের নামগুলোর কথা বলি। তাদেরকে জার্মান ভাষা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ননামে ডাকা হয়। এটা আসলে একই জিনিসকে ভিন্নভাবে দেখা মাত্র। আমি সবসময় দেখেছি যে আমার জন্য দুইটি স্টেশন থাকে। কোন কিছুর জন্য আমার যে ভাষা সেটা এবং অন্যটা হল অন্য স্টেশন। এটা শুধুমাত্র আলাদা দুটো শব্দ নয় এবং একেবারে আলাদা দুটো দৃষ্টিভঙ্গী, ভাষার স্বতন্ত্র দৃষ্টি আছে। আমার ক্ষেত্রে রুমানিয়ার ভাষা সবসময় আমার জন্য লিখেছে। যখন আমি রুমানিয়ার ভাষায় লিখছি না, তখনও। কারণ আমি আমার মাথার মধ্যে একে রেখেছি।
আলাদা ভাষার থেকেও আমার মধ্যে দুটো আলাদা দৃষ্টিভঙ্গী আছে। সেগুলো সবসময় সেখানে ছিল। আমি সত্যিই জানিনা, যখন আমি লিখি, তখন কোনটা থেকে যে গ্রহণ করি তা আমি নিজেও জানিনা।
MG: নিজের কোন লেখাটি আমাদেরকে প্রথমে পড়তে দেবেন।
HM: আমি জানিনা। জার্মান ভাষার হলে আমি আমার শেষ বইটির কথা বলবো। এটা আমার শেষ কাজ "Die Atemschaukel" এর অনেক কাছাকাছি।
MG: "Die Atemschaukel", আচ্ছা। আপনার পরিচিতি এখন অবিশ্বাস্য রকমের বেড়ে যাবে। এই বিষয়টি আপনি কিভাবে অনুভব করছেন?
HM: আমি জানিনা কি বলা দরকার।
MG: (হাসি)
HM: আমরা কেউ আসলে আলাদা ব্যক্তি নই, লেখালেখির নিজেকে নিয়ে সত্যি কিছু বলার নেই। আমি এখন সুখী, কিন্তু পৃথিবীতে আমি থেকে যাচ্ছি। সময়ের সাথে এসবকে আমার দূরে ফেলে দিতে হবে। এবং দুই কি তিন দিনের মধ্যে আমার বাড়িতে এর ধাক্কা এসে লাগা শুরু হেব। এই মুহূর্তে আমি এটা জানি। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করছি না। এটা কিভাবে হবে, তা আমি কল্পনার করতে পারছি না। আমি জানিনা এত আনন্দের আমি যোগ্য কি না? কখনও কখনও মনে হয় আনন্দের মধ্যে পাপ রয়েছে। হয়তো আমি আদতে এর যোগ্য নই। এত আনন্দের জন্য আমাকে কেন নির্বাচন করা হলো?
MG: মিস মুলার অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন।
HM: আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনার সর্বোচ্চ ভালো হোক।
MG: আপনারও সকল কিছু ভালো হোক। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, বাই।

জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন Gloria Curtance
মূল লেখার লিংক
Read More ... »
 
উপরে ফিরে আসুন