আমি সম্মানিত হব বা প্রতিদানের অন্তর্নিহিত প্রতিফল পাব
২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন পেরুবাসী স্প্যানিসভাষী সাহিত্যিক মারিয়ো ভার্গাস য়োসা (Mario Vargas Llosa)। নোবেল কমিটি তাঁকে তাঁর সারা জীবনের সাহিত্যকর্মের জন্য পুরস্কার দিয়েছেন। প্রথা অনুযায়ী পুরস্কার ঘোষণার পরপরই নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্বদের একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার টেলিফোনে নেয়া হয় এবং তা নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও ভার্গাস য়োসার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে এ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith)।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যালো
এ্যাডাম স্মিথ: ও, হ্যালো, আপনি কি মারিও ভার্সাগ য়োসা?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যা, বলছি।
এ্যাডাম স্মিথ: ওহ!, হ্যালো আমার নাম এ্যাডাম স্মিথ। আমি স্টকহোমের নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইট থেকে বলছি। পুরস্কারের খবরের জন্য আমার অভিবাদন গ্রহণ করুন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, তাহলে এটা সত্যি ছিল? হা! হা!
এ্যাডাম স্মিথ: হা! হা! এটা একেবারে নিশ্চিত...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: কারণ, আমি একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে একটা ফোন পেয়েছিলাম। বন্ধুর করা কৌতুক নাকি সত্যি তা ভেবে আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে, এটা স্টকহোমের জনসম্মুখে কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা করা হল।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: এটা ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়ে গেছে? ভাল। আমি খুব উত্তেজনা ও গর্ব বোধ করছি। আচ্ছা, আমি জানিনা কি বলতে হবে। আমি অভিভূত, সত্যি!
এ্যাডাম স্মিথ: সুন্দর বলেছেন। কয়েক বছর ধরে আপনার নোবেল পুরস্কার পাবার কথা শোনা যাচ্ছিল। পুরস্কার পেয়ে যাবার বিষয়টি তাহলে কেমন, আপনি কি জানেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা আপনি জানেন, এটা আমি জানি। কিন্তু বিশ্বাস করি না। পত্রিকায় আমাকে এটা পড়তে হবে।
এ্যাডাম স্মিথ: অবশ্যই, হ্যা, লিখিত রূপ পেলেই এটা বাস্তবরূপ পেতে পারে। আমাদের আছে...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি হৃদয়ের গভীরে আলোড়ন বোধ করছি এবং এটা সত্যি অকল্পনীয় উৎসাহব্যঞ্জক। এবং, খোলাখুলি বলি আপনি জানেন- আমি এটা আশা করিনি। আমি কখনোই বিশ্বাস করিনি যে, সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রত্যাশীদের মধ্যে আমার নাম ছিল এবং , কিন্তু, যাহোক, এটা সত্যিই কল্পনাতীত ঘটনা এবং আমি খুব বিস্ময় বোধ করছি। খুব অবাক হয়ে গেছি।
লেখালেখি করা আমার জীবনে এমন স্বপ্নীল আনন্দ এনে দেয় যে, এর জন্য আমি সম্মানিত হব বা প্রতিদানের অন্তর্নিহিত প্রতিফল পাব- তা কখনও বিশ্বাস করিনি।
এ্যাডাম স্মিথ: আমার আন্তরিক অভিবাদন গ্রহণ করুন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: যাহোক, একাডেমির সদস্যদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দেবেন।
এ্যাডাম স্মিথ: অবশ্যই। একটি সংক্ষিপ্ত টেলিফোন সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার জন্য আপনার সাথে কয়েক মিনিটের জন্য ফোনে থাকতে পারি কি?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যঁ, অবশ্যই।
এ্যাডাম স্মিথ: ধন্যবাদ। আমি জেনেছি যে আপনি শিক্ষকতার কাজে এই মুহূর্তে প্রিন্সটনে আছেন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি নিউইয়র্কে থাকি কিন্তু প্রিন্সটনে পড়াই। আমি সোম এবং মঙ্গলবার শিক্ষকতার কাজে ব্যয় করি। কিন্তু আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি নিউইয়র্কেই থাকছি।
এ্যাডাম স্মিথ: ঠিক আছে। আপনি বিভিন্ন জায়গায় বাস করেছেন। আপনি পেরুর নাগরিক।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি লিমা [ফোন লাইনে সমস্যা] ও মাদ্রিদে বাস করি। বেশিরভাগ সময় লিমা ও মাদ্রিদে থাকি।
এ্যাডাম স্মিথ: এবং আমি এটা জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি যে জায়গায় বাস করেন, তা কি আপনার লেখার ভঙ্গিতে কোন পরিবর্তন আনে? কারণ এটা, কোন কিছুতে.....
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ওহ, আমি তা মনে করিনা। আমি... না... আমি, আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে লিখেছি, কিন্তু, আহ!, আমি না... কোন নির্দিষ্ট জায়গা সম্পর্কে লেখার জন্য আমি ভ্রমণ করেছি। কিন্তু আমার কাছে যে গল্পটা আছে, পরিবেশের প্রভাবে তার ধরন পাল্টে যাবে এমনটা আমি মনে করি না... কিন্তু, হয়তো, হ্যাঁ, হয়তো, কিন্তু, খুব সচেতনভাবে তো না। হয়তো অসচেতনভাবে। হ্যাঁ, আমি যেখানেই যাই, থাকি, সে জায়গাগুলো আমাকে সমৃদ্ধ করে। আমি, আমি জানিনা [ফোন লাইনে সমস্যা]
এ্যাডাম স্মিথ: ভাষার বিষয়টা কি? কারণ... এর সম্পর্কে...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ভাষা, বিদেশে বাসরত জীবন আমাকে প্রভাবিত করে যেমন ধরুণ ভাষা স্পেনীয়দের সাথে আমার যে সম্পর্ক তাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আমি মনে করি স্পেনীয় ভাষার সাথে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ভাষার যে সাপে নেউলে সম্পর্ক তার প্রেক্ষিতে আমি নিজের ভাষাকে ভালমত বুঝতে পেরেছি। আহ, আমার ধারণা, প্রত্যেক ভাষাকেই যে একই ভাবনা প্রকাশ করতে হয়, তার সূক্ষ্ম তারতম্য সম্পর্কে আপনি সচেতন। আমি মনে করি এই সম্পর্কে [ফোন লাইনে সমস্যা] নিজের ভাষার সাথে আমার সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়েছে, কারণ স্পেনীয় ভাষা জাতীয় ভাষা নয়, এমন একাধিক দেশে আমি বসবাস করেছি। আপনি এটা জানেন।
এ্যাডাম স্মিথ: আপনি অনেক প্রকারের লেখা লিখেছেন। আপনার রচনাগুলোর প্রকারভেদ অস্বাভাবিক রকমের বেশি। এরকম হয়েছে কেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, আমি উপন্যাস লিখি এবং, আহ, কিন্তু আমি জানি আমি অলীক কাহিনীর লেখক, আপনি জানেন, কারণ আমি নাটক অথবা ছোটগল্পও লিখেছি। কিন্তু, আহ, আমি বিশ্বাস করিনা যে, বিভিন্ন রকমের লেখা উদ্দেশ্যকে বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে দেয়। এই অনুভূতিটাই আমি আমার গল্পগুলোতে বলতে চেয়েছি।
কিন্তু আমি জানি এমন কিছু গল্প নাটকে, পরে উপন্যাসগুলোতে কিংবা ছোটগল্পে বর্ণিত অথবা উপস্থাপিত হয়েছে যে, অন্য প্রসঙ্গে [ফোন লাইনে সমস্যা] অন্য কথায় বললে বলা যায়, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি মনে করি উপন্যাস হল সেইসব কথাকে বলার একটি আদর্শ পন্থা। তাই না?
এ্যাডাম স্মিথ: হ্যাঁ, এবং আমি কি রাজনীতির প্রতি আপনার আগ্রহ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারি? আপনি বলেছেন যে এক প্রকারের দায়বদ্ধতা থেকে আপনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। এটা কি ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা নাকি লেখকের দায়বদ্ধতা?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, আপনি জানেন, যখন আমি.... আমি, আমি মনে করি লেখকরাও নাগরিক। আপনি জানেন এবং যে বিতর্কে সমাজ মুখোখুখি হয়েছে এমন কোন সমস্যার সমাধান খোঁজা হয় এধরণের নাগরিক বিতর্কে অংশ নেবার মত নৈতিক দায়বদ্ধতা আপনার আছে। এর মানে এই নয় যে, আমি মনে করি লেখকদেরকে পেশাদার রাজনীতিক হতে হবে। না আমি কখনো ভাবিনি, আমি কখনো পেশাদার রাজনীতিবিদ হবার কথা ভাবিনি। পেরুর অবস্থা খুব খুব সংকটজনক হবার কারণে আমি একবার রাজনীতি করেছিলাম। মুদ্রাস্ফীতি, সন্ত্রাস, গৃহযুদ্ধ দ্বারা দেশ আক্রান্ত ছিল। আমার দৃঢ় ধারণা হয়েছিল যে, আমাদের এই ভঙ্গুর গণতন্ত্র [ফোন লাইনে সমস্যা] ধ্বসে পড়ার মুহূর্তে এটা ছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে সেটা ছিল। কিন্তু আমি এটা খুবই অসাধারণ কিছু হিসেবে করেছি। আমি খুব ভালভাবে জেনে করেছি যে এটা যা ছিল, তা এক স্বল্পস্থায়ী অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু অন্যভাবে বললে, আমি, .... আমি, আমি মনে করি লেখকদের বাকী নাগরিকদের মতো নাগরিক সমস্যা বিষয়ে অংশগ্রহণ করা উচিত। নয়তো আপনি পারবেন না... আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন না। আপনি অংশ নিতে পারবেন না [ফোন লাইনে সমস্যা] আপনি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্র হল অংশগ্রহণ। আমি বুঝতে পারিনা অংশগ্রহণের নৈতিক দায়িত্ব থেকে লেখকরা, শিল্পীরা, বুদ্ধিজীবীরা কেন মুক্ত থাকবেন।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা একটি শেষ প্রশ্ন। এই ঘোষণা আপনাকে কখনো পড়েনি এমন নতুন পাঠকমণ্ডলীর সাথে পরিচিত করিয়ে দেবে। আপনি কি শুরু করার জন্য কোন একটি নির্দিষ্ট বইকে সুপারিশ করবেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ওহ! আচ্ছা, হা! হা! আমি জানিনা। আমার ধারণা... আহ... আমি সত্যিই জানিনা, কিন্তু, হয়তো... না! আমি বলতে পারব না। আমি বলতে পারব না।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, ঠিক আছে, সেটাই ভাল। হ্যাঁ, তাদেরকে নিজেদের পছন্দের জন্য ছেড়ে দিন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: খুবই ভাল, স্যার।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, আপনাদের সাথে কথা বলে ভাল লাগল।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এ্যাডাম স্মিথ: অভিনন্দন। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। বিদায়।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: বিদায়।
১৩ অক্টোবর, ২০১০ খ্রি.
Read More ... »
অনুবাদ: সুশান্ত বর্মন
২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন পেরুবাসী স্প্যানিসভাষী সাহিত্যিক মারিয়ো ভার্গাস য়োসা (Mario Vargas Llosa)। নোবেল কমিটি তাঁকে তাঁর সারা জীবনের সাহিত্যকর্মের জন্য পুরস্কার দিয়েছেন। প্রথা অনুযায়ী পুরস্কার ঘোষণার পরপরই নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্বদের একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার টেলিফোনে নেয়া হয় এবং তা নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও ভার্গাস য়োসার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে এ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith)।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যালো
এ্যাডাম স্মিথ: ও, হ্যালো, আপনি কি মারিও ভার্সাগ য়োসা?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যা, বলছি।
এ্যাডাম স্মিথ: ওহ!, হ্যালো আমার নাম এ্যাডাম স্মিথ। আমি স্টকহোমের নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইট থেকে বলছি। পুরস্কারের খবরের জন্য আমার অভিবাদন গ্রহণ করুন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, তাহলে এটা সত্যি ছিল? হা! হা!
এ্যাডাম স্মিথ: হা! হা! এটা একেবারে নিশ্চিত...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: কারণ, আমি একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে একটা ফোন পেয়েছিলাম। বন্ধুর করা কৌতুক নাকি সত্যি তা ভেবে আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে, এটা স্টকহোমের জনসম্মুখে কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা করা হল।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: এটা ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়ে গেছে? ভাল। আমি খুব উত্তেজনা ও গর্ব বোধ করছি। আচ্ছা, আমি জানিনা কি বলতে হবে। আমি অভিভূত, সত্যি!
এ্যাডাম স্মিথ: সুন্দর বলেছেন। কয়েক বছর ধরে আপনার নোবেল পুরস্কার পাবার কথা শোনা যাচ্ছিল। পুরস্কার পেয়ে যাবার বিষয়টি তাহলে কেমন, আপনি কি জানেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা আপনি জানেন, এটা আমি জানি। কিন্তু বিশ্বাস করি না। পত্রিকায় আমাকে এটা পড়তে হবে।
এ্যাডাম স্মিথ: অবশ্যই, হ্যা, লিখিত রূপ পেলেই এটা বাস্তবরূপ পেতে পারে। আমাদের আছে...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি হৃদয়ের গভীরে আলোড়ন বোধ করছি এবং এটা সত্যি অকল্পনীয় উৎসাহব্যঞ্জক। এবং, খোলাখুলি বলি আপনি জানেন- আমি এটা আশা করিনি। আমি কখনোই বিশ্বাস করিনি যে, সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রত্যাশীদের মধ্যে আমার নাম ছিল এবং , কিন্তু, যাহোক, এটা সত্যিই কল্পনাতীত ঘটনা এবং আমি খুব বিস্ময় বোধ করছি। খুব অবাক হয়ে গেছি।
লেখালেখি করা আমার জীবনে এমন স্বপ্নীল আনন্দ এনে দেয় যে, এর জন্য আমি সম্মানিত হব বা প্রতিদানের অন্তর্নিহিত প্রতিফল পাব- তা কখনও বিশ্বাস করিনি।
এ্যাডাম স্মিথ: আমার আন্তরিক অভিবাদন গ্রহণ করুন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: যাহোক, একাডেমির সদস্যদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দেবেন।
এ্যাডাম স্মিথ: অবশ্যই। একটি সংক্ষিপ্ত টেলিফোন সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার জন্য আপনার সাথে কয়েক মিনিটের জন্য ফোনে থাকতে পারি কি?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: হ্যঁ, অবশ্যই।
এ্যাডাম স্মিথ: ধন্যবাদ। আমি জেনেছি যে আপনি শিক্ষকতার কাজে এই মুহূর্তে প্রিন্সটনে আছেন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি নিউইয়র্কে থাকি কিন্তু প্রিন্সটনে পড়াই। আমি সোম এবং মঙ্গলবার শিক্ষকতার কাজে ব্যয় করি। কিন্তু আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি নিউইয়র্কেই থাকছি।
এ্যাডাম স্মিথ: ঠিক আছে। আপনি বিভিন্ন জায়গায় বাস করেছেন। আপনি পেরুর নাগরিক।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আমি লিমা [ফোন লাইনে সমস্যা] ও মাদ্রিদে বাস করি। বেশিরভাগ সময় লিমা ও মাদ্রিদে থাকি।
এ্যাডাম স্মিথ: এবং আমি এটা জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি যে জায়গায় বাস করেন, তা কি আপনার লেখার ভঙ্গিতে কোন পরিবর্তন আনে? কারণ এটা, কোন কিছুতে.....
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ওহ, আমি তা মনে করিনা। আমি... না... আমি, আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে লিখেছি, কিন্তু, আহ!, আমি না... কোন নির্দিষ্ট জায়গা সম্পর্কে লেখার জন্য আমি ভ্রমণ করেছি। কিন্তু আমার কাছে যে গল্পটা আছে, পরিবেশের প্রভাবে তার ধরন পাল্টে যাবে এমনটা আমি মনে করি না... কিন্তু, হয়তো, হ্যাঁ, হয়তো, কিন্তু, খুব সচেতনভাবে তো না। হয়তো অসচেতনভাবে। হ্যাঁ, আমি যেখানেই যাই, থাকি, সে জায়গাগুলো আমাকে সমৃদ্ধ করে। আমি, আমি জানিনা [ফোন লাইনে সমস্যা]
এ্যাডাম স্মিথ: ভাষার বিষয়টা কি? কারণ... এর সম্পর্কে...
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ভাষা, বিদেশে বাসরত জীবন আমাকে প্রভাবিত করে যেমন ধরুণ ভাষা স্পেনীয়দের সাথে আমার যে সম্পর্ক তাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আমি মনে করি স্পেনীয় ভাষার সাথে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ভাষার যে সাপে নেউলে সম্পর্ক তার প্রেক্ষিতে আমি নিজের ভাষাকে ভালমত বুঝতে পেরেছি। আহ, আমার ধারণা, প্রত্যেক ভাষাকেই যে একই ভাবনা প্রকাশ করতে হয়, তার সূক্ষ্ম তারতম্য সম্পর্কে আপনি সচেতন। আমি মনে করি এই সম্পর্কে [ফোন লাইনে সমস্যা] নিজের ভাষার সাথে আমার সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়েছে, কারণ স্পেনীয় ভাষা জাতীয় ভাষা নয়, এমন একাধিক দেশে আমি বসবাস করেছি। আপনি এটা জানেন।
এ্যাডাম স্মিথ: আপনি অনেক প্রকারের লেখা লিখেছেন। আপনার রচনাগুলোর প্রকারভেদ অস্বাভাবিক রকমের বেশি। এরকম হয়েছে কেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, আমি উপন্যাস লিখি এবং, আহ, কিন্তু আমি জানি আমি অলীক কাহিনীর লেখক, আপনি জানেন, কারণ আমি নাটক অথবা ছোটগল্পও লিখেছি। কিন্তু, আহ, আমি বিশ্বাস করিনা যে, বিভিন্ন রকমের লেখা উদ্দেশ্যকে বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে দেয়। এই অনুভূতিটাই আমি আমার গল্পগুলোতে বলতে চেয়েছি।
কিন্তু আমি জানি এমন কিছু গল্প নাটকে, পরে উপন্যাসগুলোতে কিংবা ছোটগল্পে বর্ণিত অথবা উপস্থাপিত হয়েছে যে, অন্য প্রসঙ্গে [ফোন লাইনে সমস্যা] অন্য কথায় বললে বলা যায়, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি মনে করি উপন্যাস হল সেইসব কথাকে বলার একটি আদর্শ পন্থা। তাই না?
এ্যাডাম স্মিথ: হ্যাঁ, এবং আমি কি রাজনীতির প্রতি আপনার আগ্রহ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারি? আপনি বলেছেন যে এক প্রকারের দায়বদ্ধতা থেকে আপনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। এটা কি ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা নাকি লেখকের দায়বদ্ধতা?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আচ্ছা, আপনি জানেন, যখন আমি.... আমি, আমি মনে করি লেখকরাও নাগরিক। আপনি জানেন এবং যে বিতর্কে সমাজ মুখোখুখি হয়েছে এমন কোন সমস্যার সমাধান খোঁজা হয় এধরণের নাগরিক বিতর্কে অংশ নেবার মত নৈতিক দায়বদ্ধতা আপনার আছে। এর মানে এই নয় যে, আমি মনে করি লেখকদেরকে পেশাদার রাজনীতিক হতে হবে। না আমি কখনো ভাবিনি, আমি কখনো পেশাদার রাজনীতিবিদ হবার কথা ভাবিনি। পেরুর অবস্থা খুব খুব সংকটজনক হবার কারণে আমি একবার রাজনীতি করেছিলাম। মুদ্রাস্ফীতি, সন্ত্রাস, গৃহযুদ্ধ দ্বারা দেশ আক্রান্ত ছিল। আমার দৃঢ় ধারণা হয়েছিল যে, আমাদের এই ভঙ্গুর গণতন্ত্র [ফোন লাইনে সমস্যা] ধ্বসে পড়ার মুহূর্তে এটা ছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে সেটা ছিল। কিন্তু আমি এটা খুবই অসাধারণ কিছু হিসেবে করেছি। আমি খুব ভালভাবে জেনে করেছি যে এটা যা ছিল, তা এক স্বল্পস্থায়ী অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু অন্যভাবে বললে, আমি, .... আমি, আমি মনে করি লেখকদের বাকী নাগরিকদের মতো নাগরিক সমস্যা বিষয়ে অংশগ্রহণ করা উচিত। নয়তো আপনি পারবেন না... আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন না। আপনি অংশ নিতে পারবেন না [ফোন লাইনে সমস্যা] আপনি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্র হল অংশগ্রহণ। আমি বুঝতে পারিনা অংশগ্রহণের নৈতিক দায়িত্ব থেকে লেখকরা, শিল্পীরা, বুদ্ধিজীবীরা কেন মুক্ত থাকবেন।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা একটি শেষ প্রশ্ন। এই ঘোষণা আপনাকে কখনো পড়েনি এমন নতুন পাঠকমণ্ডলীর সাথে পরিচিত করিয়ে দেবে। আপনি কি শুরু করার জন্য কোন একটি নির্দিষ্ট বইকে সুপারিশ করবেন?
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: ওহ! আচ্ছা, হা! হা! আমি জানিনা। আমার ধারণা... আহ... আমি সত্যিই জানিনা, কিন্তু, হয়তো... না! আমি বলতে পারব না। আমি বলতে পারব না।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, ঠিক আছে, সেটাই ভাল। হ্যাঁ, তাদেরকে নিজেদের পছন্দের জন্য ছেড়ে দিন।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: খুবই ভাল, স্যার।
এ্যাডাম স্মিথ: আচ্ছা, আপনাদের সাথে কথা বলে ভাল লাগল।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এ্যাডাম স্মিথ: অভিনন্দন। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। বিদায়।
মারিয়ো ভার্গাস য়োসা: বিদায়।
১৩ অক্টোবর, ২০১০ খ্রি.